বিতর্ক থেকে সংসদীয় বিতর্কে

তারেক আজিজ

সহ সভাপতি, ডিবেট ফর হিউম্যানিটি-ডিএফএইচ

বিতর্কের ইতিহাস নিয়ে কম ইতিহাস রচিত হয়নি আর তা নতুন করে রচনাও কোন প্রয়োজন নেই। এ লেখায় চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাসের পাঠ উদ্ধারের এবং সন্নিবেশিত আকারে তুলে ধরার আর অন্য অংশে সংসদীয় বিতর্কের মৌলিক আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে।
মানুষের জন্ম এবং বিতর্ক এই দুটি বিষয় একই সুতায় গাঁথা তাই বলা চলে বিতর্ক ও মানুষ অবিচ্ছেদ্য। অন্যভাবে বললে মানুষ মানুষ হয়ে ওঠতোনা যদি না তার নিজের ভিতর বিতর্ক থাকতো। যেদিন থেকে মানুষের জন্ম সেদিন থেকেই বিতর্কের যাত্রা শুরু। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, মানুষ যখন থেকে ভাষার ব্যবহার শুরু করেছে সেদিন থেকেই বিতর্কের যাত্রা শুরু হয়েছে।
অপরদিকে জ্ঞান চর্চার মাধ্যম হিসেবে বিতর্কের ইতিহাস সুপ্রাচীন এবং সেই সময়কার বিতর্কের তেমন কোন লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়নি। আর তাই ঐতিহাসিক দলিল না থাকায় উপরের অংশের আলোচনার কোন প্রাতিষ্ঠানিক মূল্য নেই বললেই চলে। তাই ইতিহাসের লিখিত প্রমাণই আমাদের মূল্যবান দলিল এবং তার উপরই ভিত্তি করে ইতিহাস পাঠ করা উচিৎ।
তবে গঠনমূলক জ্ঞান চর্চার মাধ্যম হিসেবে বিতর্কের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রীসে। দার্শনিক সক্রেটিস, তাঁর শিষ্য প্লেটো, প্লেটোর শিষ্য এরিসষ্টটল-এর সময়কালে প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিতর্কের যাত্রা শুরু। সেই সময়কালে গাছ তলা থেকে পাঠশালায় বিতর্ক একটি মাধ্যম হিসেবে অবস্থান তৈরি করে এবং পদ্ধতি হিসেবে গৃহিত হয়। প্লেটো এবং সক্রেটিসের রচনা কৌশল ও আলোচনার পদ্ধতি লক্ষ্য করলেও প্রতিয়মান হয় যে তা যর্থাথই বিতর্ক ভিত্তিক ও যুক্তি নির্ভর যা প্রমাণ করে তাদের সময়কার বিতর্ক চর্চার ইতিহাস।
চীনে দার্শনিক কনফুসিয়াসের সময়কালেও বিতর্কের আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকিকরণের ইতিহাস পাওয়া যায়। সেই সময়ে বিতর্কের অবস্থান অনেক বেশি দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত ছিল কারণ কনফুসিয়াস শিক্ষা ও শিক্ষা লাভের প্রক্রিয়া ছিল পারিশ্রমীকের আওতাভুক্ত এবং তা অর্জনে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মূল্য (ধন-সম্পদ বা উৎপাদন কাজে শ্রম) প্রদান করতে হতো।
অপর দিকে, প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে আরব বিশ্বে ইসলাম ধর্মের বিধানের ব্যাপারে বির্তকের সবোর্চ্চ ব্যবহারিক ইতিহাস পাওয়া যায়। এ সময়কালে কোরআনের বিভিন্ন রূপক ও জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যায় খলিফারা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিতর্ক করতেন এবং যুক্তি তুলে ধরতেন। আর এ প্রক্রিয়ার ভিত্তি ছিল পবিত্র কোরআনের বর্ণিত নির্দেশ, ‘মানুষকে তোমার প্রতিপালকের প্রতি আহ্বান করো হিকমা (নরম/মার্জিত ভাবে) ও সৎ উপদেশ দ্বারা, তাদের সাথে তর্ক কর আর যুক্তি দেখাও সবচেয়ে উত্তম পন্থায়।’- সুরা নাহাল আয়াত-১২৫.
গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলো থেকেই বিতর্কের প্রাতিষ্ঠানিকতা শুরু এবং বির্তকের জন্মভূমি হিসেবে গ্রিসের নাম সন্দেহের উর্দ্ধে। ২০১০ বছর পূর্বে (২০১৫ সাল থেকে) নগর রাষ্ট্র এথেন্সে রাষ্ট্রীয় নীতি ও কর্মপ্রক্রিয়া নির্ধারণে বিতর্কের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়।
বিতর্ক এথেন্সকে মুখরিত করে রেখেছিল কারণ কার্যকর গণতন্ত্রের চর্চা প্রাচীন গ্রীসের প্রাচীন ইতিহাস। তখন এথেন্সের নাগরিকদের যেমন অধিকারের সমতা ছিল তেমনই ছিল আলোচনা বা বিতর্কের বিধি। ইংরেজি ছবি ‘থ্রি হান্ডেড’ দৃশ্য নির্মাণে গ্রীসের ইতিহাসের পাঠকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অপরদিকে সমুদ্র ঘেরা গ্রীসের সমুদ্র জয় যেমন বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছে তেমনই যুদ্ধ জয়েও নতুন অভিজ্ঞতা ও কৌশল আয়ত্বে সহায়তা করেছে। উদাহরণ হিসেবে এথেন্সের সাথে প্রতিবেশী জনপদ স্পার্টার এর তুলনা করলে তা আরো স্পষ্ট হয়। তাই পরিবেশ ও প্রকৃতির কল্যানে এথেন্সবাসী অনেক বেশি বাস্তবিক ও যুক্তি নির্ভর ছিল এবং এ কারণেও তাদের মধ্যে ভিন্ন মতের এবং যুক্তির প্রবণতাও তুলনামূলক বেশি ছিল। আর তাই এ তর্ক, মত বা যুক্তিকে সংক্ষেপে ও সুনিদির্ষ্টভাবে তুলে ধরার কৌশল আয়ত্ব করে রাষ্ট্র পরিচালনার পর্ষদগণের সহকর্মীগণ। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিণত করতে সমর্থ হয় যাদেরকে বলা হত সফিষ্ট। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৯ অব্দে প্রাচীন গ্রিসে সোফিস্ট নামক এ পেশাদার কূটতার্কিক সম্প্রদায় রাষ্ট্র পরষদের সদস্যদেরকে যুক্তি নির্ভর বক্তব্য লিখিয়ে এমনকি শিখিয়ে পর্যন্ত দিতেন যেন বিধান সভায় বা পরিষদে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অন্যের সমর্থন অদায় করতে পারে। বার্ট্র্রান্ড রাসেল রচিত History of Western Philosophy বইতে সফিস্টদের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।
তবে সফিষ্টদের ভূমিকার পরিপেক্ষিতে তাদেরকে বির্তাকিক বলা যাবে না বরং তারা কূটতার্কিক বলাই যুক্তিযুক্ত। তবে তাদের উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সাথে বির্তকের মিল যথেষ্ট। তারা রাজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের সংশয়কে বিতর্কের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতো। তবে অন্যান্য সম্প্রদায় বা গোষ্ঠি হতে তাদের বিশেষত্ব্ হল তারা ধর্মীয় বিশ্বাস, ভাবাবেগ এবং নিজের স্বার্থকে বাদ দিয়ে তাদের বক্তব্যে যুক্তিকে প্রাধান্য দিত। সেকালে এথেন্সের শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন ডেমোস্থেনেস যা বিবরণ পাওয়া যায় ফ্রান্সিস বেকন রচিত প্রবন্ধ- Of Boldness এ। তবে মজার বিষয় হলো এ স্মরণীয় বাগ্মী বক্তা শৈশবে তোতলা ছিলেন।
সে সময়কার আলোচনায় যে উদাহরণগুলো বিভিন্ন লিখনিতে পাওয়া যায় তাদের অন্যতম, গ্রীস কবি হোমার এবং দার্শনিক হেরাক্লিটাস এর মধ্যেকার মতভেদ। গ্রীস কবি হোমার একবার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন, যেন দেবতা ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান হয়। এটা জানার পর গ্রীসের বিখ্যাত দার্শনিক হেরাক্লিটাস যুক্তি দেখালেন, দ্বন্দ্ব ছাড়া গতি অসম্ভব, দ্বন্দ্বই বিকাশ। দ্বন্দ্বের অবসানে জগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই হোমারের প্রার্থনা ফেরত নিতে বলা হয়। অপর একটি উদাহরণ হল উইপোকার পা নিয়ে চলা বিতর্কের গল্প যার উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক আব্দুল হালিমের ডায়ালেকটিক বস্তুবাদ পরিচিতি গ্রন্থে।
তৎকালীন সময়ে বিতর্ক এতই জনপ্রিয় ও নির্ভরতার প্রতীক ছিল যে, রাজনীতি বা রাজ্যের নীতি নির্ধারণের প্রায় সকল পর্যায়েই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হত। দিনে দিনে বিতর্ক গ্রীসের প্রাচীর অতিক্রম করে প্রবেশ করলে অন্যান্য দেশে। অনেকের মতে রাজনীতির এই পটভূমিকে নিয়ে গড়ে ওঠা বিতর্ক থেকেই একসময় সংসদীয় বিতর্কের জন্ম হয় যার সূতিকাগার হল ইংল্যান্ড।
প্রকৃতপক্ষে সংসদীয় বিতর্কের প্রচলিত প্রথা বা মূল ধারাটি এসেছে ১৮৩২ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘হাউজ অব কমন্স’ বা নিম্নকক্ষের অধিবেশনে আয়োজিত বিষয়ভিত্তিক তর্কযুদ্ধকে অনুসরণ করে। ‘পার্লামেন্ট’ শব্দে আদি অর্থ ‘কথকতা’। ল্যাটিন ভাষ্য অনুযায়ী ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভিক্ষুকরা তাদের খাবার গ্রহণের পরে মাঠে বসে যে আলাপ-চারিতা করতো তাই আদি অর্থে পার্লামেন্ট নামে পরিচিত ছিল।
ফ্রান্সের চতুর্দশ লুই এবং চতুর্থ পোপ ইনোসেন্টের মধ্যে ১২৪৫ সালে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তাও ‘পার্লামেন্ট’ নামেই পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ইংলেন্ডের রাজা তৃতীয় হেনরী রাজ্যের বিখ্যাত জ্ঞানী ও পন্ডিতদের নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও সমস্যার আলোচনা ও পরামর্শ করার জন্য যে সম্মেলন ডাকতেন বা করতেন তাকেও বলা হত ‘হেনরী পার্লামেন্ট’। ইংলেন্ডের রাজা তৃতীয় হেনরীকে অনুসরণ করে প্রথম এডওয়ার্ড যে জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেন তারও নাম দেয়া হয়-‘পার্লামেন্ট’। পরবর্তীতে ১২৯৫ সালে একে ‘মডেল পার্লামেন্ট’ নামে অবহিত করা হয়। এরপর রাজা টিউডর ও স্টুয়ার্টরাও এই প্রথা মেনে চলেন এবং এর ধারাবাহিকতায় ১৮৩২ সালে বৃটেনের বর্তমান পার্লামেন্টের শুরু হয় যা সংসদীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় বিতর্কের আইন নির্ধারণী স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ছাত্র-সংগঠনের মধ্যে সংসদীয় বিতর্ককে জনপ্রিয় করার জন্য প্রথম এগিয়ে আসে অক্সফোর্ড ডিবেটিং ইউনিয়ন এবং পরবর্তীতে এর সাথে যোগ দেয় ক্যামব্রিজ ডিবেটিং ইউনিয়ন। অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ ডিবেটিং ইউনিয়নকে তাই সংসদীয় বিতর্ক অঙ্গনে কিংবদন্তি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সপ্তদশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে WHIG & CLIOSOPHIC নামক দুটি বির্তক সংগঠন গড়ে তোলে যা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম ডিবেটিং ক্লাব এবং এর সদর দপ্তর অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সচটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসদীয় বিতর্ককের এই ক্রমবিকাশের সাথে ক্রমান্বয়ে যোগ দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডসহ অন্যান্য ইংরেজি ভাষাভাষি দেশ। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশও তাদের সাথে যুক্ত হয়।
আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ ১৯৯১ সালে ঢাকায় দক্ষিণ এশিয় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংসদীয় বিতর্কে প্রবেশ করে এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলাদেশের বিতর্ক আন্দোলনে ঢাকা ইউনির্ভাসিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) এর অবদান ও কৃতিত্ব অগ্রগন্য। বাংলাদেশে বিতর্ক ইতিহাস যে কয়েকজন মানুষের হাত ধরে শুরু হয়েছিল তাদের অন্যতম মাহফুজ আনাম (সম্পাদক-দি ডেইলী ষ্টার), সৈয়দ মঞ্জুরূল ইসলাম (অধ্যাপক-ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও এমএম আকাশ (অধ্যাপক-অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) তবে আরো নাম না জানা অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্ক চর্চা শুরু করেন। তবে সে সময় বাংলা ও ইংরেজীতে সনাতনী ধারার বিতর্ক চর্চা হত।
বাংলাদেশে সংসদীয় বিতর্কের ইতিহাস পাওয়া যায় ১৯৫০ সালে স্যার সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হল (এসএম হল) যার অবস্থান ছিল বর্তমানের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভবন। তৎকালীন ছাত্র সংসদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিতর্কের। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রথম বিতর্ক প্রতিযোগিতার সম্প্রচার করে এবং বিতর্ককে একটি অন্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার যাত্রা শুরু করে।

 

সংসদীয় বিতর্ক:
বাংলাদেশে বিতর্ক লাভ করেছে বিভিন্নরূপ তবে এর অনেকগুলো এখন আর প্রচলিত নয়। তারপরও বাংলা ভাষায় চর্চাকৃত নিচের ১৯ রকমের বিতর্কের ইতিহাস পাওয়া যায়- (১) সনাতনী বিতর্ক, (২) সংসদীয় বিতর্ক, (৩) বারোয়ারি বিতর্ক, (৪) মুক্ত বিতর্ক, (৫) রূপকধর্মী বিতর্ক, (৬) পুঞ্জ বিতর্ক, (৭) সৃষ্টি-স্রষ্টা বিতর্ক, (৮) জাতিসংঘ মডেল বিতর্ক, (৯) টি-ফরমেট বিতর্ক, (১০) প্লানচ্যাট বিতর্ক, (১১) রম্য বিতর্ক, (১২) জুটি বিতর্ক, (১৩) আঞ্চলিক বিতর্ক, (১৪) বর্জ্র্য বিতর্ক, (১৫) প্রতিবাদী বিতর্ক (১৬) ওয়ার্ল্ড ফরমেট সংসদীয় বিতর্ক (১৭) শিশু বিতর্ক (১৮) পরস্পরা বিতর্ক (১৯) লোকজ বিতর্ক।
আমাদের এবারের আলোচ্য সংসদীয় বিতর্ক যাকে বলা হয় বাংলা বিতর্কের প্রাণ। একজন বক্তার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ত্ব, অন্যকে মোকাবেলা করার দক্ষতা এবং কৌশলী উপস্থাপনার সমন্বয় সংসদীয় বিতর্ককে এখনও রেখেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশে এ বিতর্কের চর্চা এবং প্রতিযোগীতামূলক আয়োজন সবচেয়ে বেশি এবং এটি জনপ্রিয়ও বটে।
সংসদীয় বিতর্কের বৈশিষ্ট্যের আলোকে এর সার্বিক আলোচনাকে করা হল;
পক্ষ-বিপক্ষ:
জাতীয় সংসদের আদলে ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষের দলকে-সরকারী দল এবং প্রস্তাবের বিপক্ষের দলকে-বিরোধী দল বলে। এই দুটি দলের ছয়জন বক্তাকে নিয়ে আয়োজন করা হয় সংসদীয় বিতর্ক। সরকারী দলের তিনজন সদস্যকে বলা হয়-প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আর বিরোধী দলের তিনজন সদস্যকে বলা হয়- বিরোধী দলীয় নেতা, উপনেতা ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য।
স্পীকারের ডান দিকে সরকারী দল এবং বিরোধী দল বাম দিকে বসে।
পরিচালনা:
সংসদীয় বিতর্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন একজন স্পীকার আর বিচারকবৃন্দ। সংসদীয় বিতর্কে স্পিকার সর্বময় ক্ষমতায় অধিকারী এবং তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে স্পিকারের কাজে সহযোগীতার জন্য ডেপুটি স্পিকার এবং বিতর্ককে বিশেষকোন দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষন করার জন্য বিশ্লেষক বা পর্যালোচকও রাখা হয়।
বর্তমানে স্পিকার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব উত্থাপন ও বক্তব্য প্রদানের জন্য আহবান জানান। তবে ২০০৭ সালের পূর্র্বে, প্রধানমন্ত্রী স্পিকারের কাছে প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য প্রথমে অনুমতি চাইতেন এবং স্পিকারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব উত্থাপন ও বক্তব্য প্রদান করতেন।
পর্বসমূহ:
সদীয় বিতর্কে দুটি পর্ব থাকে-গঠনমূলক পর্ব ও যুক্তিখন্ডন পর্ব। গঠনমূলক পর্বে মূলত প্রস্তাবের সংঙ্গায়ন, বিশ্লেষণ এবং সম্প্রসারণ করা হয়। অপর দিকে যুক্তিখন্ডন পর্বে নিজ দলের যুক্তি বিশ্লেষণ এবং বিপক্ষদলের যুক্তি খন্ডন করা হয়।
বক্তব্য প্রদানের ধারাবাহিকতা:
সংসদীয় বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী হলেন সংসদের প্রথম ও শেষ বক্তা। অর্থাৎ গঠনমূলক পর্বে সূচনা বক্তব্য ও যুক্তিখন্ডন পর্বে সর্বশেষ যুক্তিখন্ডন করেন প্রধানমন্ত্রী। সনাতনী বিতর্ক থেকে সংসদীয় বিতর্কের এটি একটি মৌলিক পার্থক্য।
সংসদীয় বিতর্কে সরকারী ও বিরোধী দলের বক্তাদের বক্তব্য রাখার ধারাবাহিকতা-
গঠনমূলক পর্ব: (১) প্রধানমন্ত্রী (২) বিরোধী দলীয় নেতা (৩) মন্ত্রী (৪) উপনেতা (৫) সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (৬) বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য;
যুক্তিখন্ডন পর্ব: (৭) বিরোধী দলীয় নেতা (৮) প্রধানমন্ত্রী।
পয়েন্ট সমূহ:
সংসদীয় বিতর্কে তিন ধরনের পয়েন্ট ব্যবহৃত হয়- পয়েন্ট অব ইনফরমেশন, পয়েন্ট অব প্রিভিলেজ এবং পয়েন্ট অব অর্ডার।
পয়েন্ট অব ইনফরমেশন- বক্তার বক্তব্যের তথ্যসূত্র জানতে চেয়ে, কোন একটি নির্দিষ্ট অংশের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে বা অস্পষ্টতা দূর করতে যে প্রশ্ন করা হয় তাকে পয়েন্ট অব ইনফরমেশন বলে।
পয়েন্ট অব প্রিভিলেজ- এটি দুধরণের; বিধি সংক্রান্ত এবং ব্যক্তিগত। পয়েন্ট অব প্রিভিলেজ ও পয়েন্ট অব পারসনাল প্রিভিলেজ যে কারণে তোলা যেতে পারে- কোন বক্তার বক্তব্য ফ্লোর স্পিকার ত্রুটির্পণূভাবে প্রকাশ করলে, কোন বক্তাকে অবমাননা করা হলে, কোন বক্তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হলে, কোন বক্তাকে অবমাননা করা হলে, কোন বক্তাকে অবমাননা করা হলে, অতিরিক্ত হেকলিং বা হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করা হলে
পয়েন্ট অব অর্ডার- এটি দুধরণের; বিধি সংক্রান্ত এবং সময় সংকান্ত। পয়েন্ট অব অর্ডার যে কারণে তোলা যেতে পারে-বরাদ্দকৃত সময়ের শেষ হবার ১৫ সেকেন্ড সময় পরও বক্তব্য দিতে থাকলে, যুক্তি-খন্ডন পর্বে নতুন যুক্তি উত্থাপন করলে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সংজ্ঞা, ব্যাখ্যার বা ক্ষেত্রের বাইরে গিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করলে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যার বা ক্ষেত্র ভুলভাবে উপস্থাপন করলে, সংসদীয় নিয়ম বা রীতির বাইরে কোন নিময় অনুসরণ করে বক্তব্য রাখা হলে এবং ফ্লোর স্পিকার কোন হুমকি বা ভয় দেখালে।
গঠনমূলক পর্বে দ্বিতীয় মিনিট হতে পরবর্তী ৩ মিনিট ও যুক্তিখন্ডন পর্বে প্রথম মিনিট হতে পরবর্তী ১ মিনিটের মধ্যে পয়েন্ট অব ইনফরমেশন এবং পয়েন্ট অব প্রিভিলেজ তুলা যায়।
গঠনমূলক পর্বে দ্বিতীয় মিনিট হতে পরবর্তী ৪ মিনিট ও যুক্তিখন্ডন পর্বে প্রথম মিনিট হতে পরবর্তী ২ মিনিটের মধ্যে পয়েন্ট অব অর্ডার তুলা যায়।
প্রস্তাব:
সংসদীয় বিতর্কের বিষয়কে সাধারণত ‘প্রস্তাব’ বলা হয় তবে অনেক ক্ষেত্রে ‘বিল’ বলা হয়। যে বিষয়ে সরকারী দল আইন প্রণয়ন করতে চায় সেগুলোকে বিল হিসেবে উত্থাপন করা হয়। সংসদীয় বিতর্কের বিষয়ের শেষে ‘হোক’ বা ‘উচিৎ’ শব্দ যুক্ত থাকলে তাকে বিল বলে। যেমন-প্রকাশে ধুমপান বন্ধ করা হোক, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া উচিৎ।
আর সংসদীয় বিতর্কের বিষয়ের শেষে ‘হোক’ বা ‘উচিৎ’ শব্দ যুক্ত না থাকলে তাকে প্রস্তাব বলে। যেমন- প্রকাশে ধুমপান বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সম্প্রচার বন্ধ সময়ের দাবী।
সময়:
গঠনমূলক পর্বের সময় মোট ৫ মিনিট, ১ মিনিট ও ৪ মিনিট পর ১বার সতর্ক সংকেত এবং ৫ মিনিটে চূড়ান্ত সংকেত। ৫ মিনিটের পর সবোর্চ্চ ১০ সেকেন্ড সময় দেয়া যেতে পারে এবং এর অতিরিক্ত হলে বিধিভঙ্গের কারণে শাস্তিমূলক নেতিবাচক নম্বর প্রদান করা যেতে পারে।
যুক্তিখন্ডন পর্বের সময় মোট ৩ মিনিট, ১ মিনিট ও ২ মিনিট পর ১বার সতর্ক সংকেত এবং ৩ মিনিটে চূড়ান্ত সংকেত। ৩ মিনিটের পর সবোর্চ্চ ১০ সেকেন্ড সময় দেয়া যেতে পারে এবং এর অতিরিক্ত হলে বিধিভঙ্গের কারণে শাস্তিমূলক নেতিবাচক নম্বর প্রদান করা যেতে পারে।
২০১৪ সাল থেকে কৌশলগত সময় বা স্ট্যাটিজিক টাইম বলে বিরোধী দলের জন্য ১ মিনিটের একটি নতুন নিয়ম সংযুক্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে বিরোধীদলের কৌশল নির্ধারণের জন্য ১ মিনিটের সময় বরাদ্দ রাখা হয় যাকে বলা হয় কৌশলগত সময় বা স্ট্যাটিজিক টাইম। স্পীকারের অনুমতি সাপেক্ষে বিরোধী দল এ সময় নিতে পারে।
দায়িত্বসমূহ:
বক্তব্য প্রদানের ধারাবাহিকতার আলোকে বক্তাদের দায়িত্ব সংক্ষেপে তুলে ধরা হল;
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব- প্রস্তাব উত্থাপন করা, সংঙ্গা প্রদান করা, নিজ দলের দলীয় অবস্থান ও কৌশল তুলে ধরা, ক্ষেত্র চিহ্নিত করা, যুক্তিখন্ডন পর্বে যুক্তিখন্ডন করা ও কোন যুক্তির অস্পষ্টতা থাকলে তার ব্যাখ্যা করা, সমাপনি বক্তব্য প্রদান করা ইত্যাদি।
বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব- প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃক প্রদানকৃত সংঙ্গায় মেনে নিচ্ছে কি না তা জানানো, কোন বিষয়ের সংজ্ঞায় প্রধানমন্ত্রী করতে ভুলে গিয়ে থাকতে তার সংজ্ঞায় করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা প্রদান করা, বিরোধীতার ক্ষেত্র চিহ্নত করা, নিজ দলের দলীয় অবস্থান ও কৌশল তুলে ধরা, দলীয় অবস্থান ও বক্তব্যের দূর্বলতা তুলে ধরা, যুক্তিখন্ডন পর্বে যুক্তিখন্ডন করা ও কোন যুক্তির অস্পষ্টতা থাকলে তার ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। ইত্যাদি।
সরকার দলীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব- প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃক প্রদানকৃত সংঙ্গায়নের পূর্ণ ব্যাখ্যা করা ও বক্তব্য সম্প্রসারণ করা, বিরোধী দলের দলীয় অবস্থান ও বক্তব্যের দূর্বলতা তুলে ধরা, নিজ দলের দলীয় অবস্থানের পক্ষে যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব ও উদাহরণ তুলে ধরা ও যুক্তিখন্ডন করা ইত্যাদি।
বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব- নিজ দলের নেতার সংঙ্গায়নের পূর্ণ ব্যাখ্যা করা ও বক্তব্য সম্প্রসারণ করা, সরকারী দলের দলীয় অবস্থান ও বক্তব্যের দূর্বলতা তুলে ধরা, নিজ দলের দলীয় অবস্থানের পক্ষে যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব ও উদাহরণ তুলে ধরা ও যুক্তিখন্ডন করা ইত্যাদি।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের দায়িত্ব- নিজ দলের দলীয় অবস্থানের পক্ষে যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব ও উদাহরণ তুলে ধরা, যুক্তিখন্ডন করা, দলীয় সমন্বয় ও সার-সংক্ষেপ করা ইত্যাদি।
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যের দায়িত্ব- নিজ দলের দলীয় অবস্থানের পক্ষে যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব ও উদাহরণ তুলে ধরা, যুক্তিখন্ডন করা, দলীয় সমন্বয় ও সার-সংক্ষেপ করা ইত্যাদি।
নম্বর প্রদান:
সংসদীয় বিতর্কের মূল্যায়ন পত্রের একটি নমুনা এখানে দেয়া হল তবে এর কোন সর্বজন স্বীকৃত নমুনা নেই। তবে নম্বর প্রদান করা হলেও ফলাফল সাধারণত দেয়া হয় এবং উচিৎ ব্যালট বা ভোটের ভিত্তিতে। বিচারকরা যে বিষয়ে নম্বর প্রদান করে থাকেন- উচ্চারণ, উপস্থাপনা ও বাচনভঙ্গি-১০ নম্বর; সংঙ্গায়ন ও বিশ্লেষণ-১০ নম্বর; যুক্তি প্রদান ও যুক্তি-খন্ডন-১০ নম্বর; তত্ত্ব, তথ্য, উপাত্ত-১০ নম্বর; পেনাল্টি- নম্বর এবং য্ুিক্ত-খন্ডন পর্ব-১০ নম্বর।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য পেনাল্টির ঘরে বিচারক যত নম্বর প্রদান করা হবে তা বক্তার প্রাপ্ত নম্বর হতে বিয়োগ করা হবে কারণ এটি নেতিবাচক নম্বর বা নেগেটিভ মার্কিং।
ট্রুইজম:
সরকারী দল সংঙ্গায় বলল যে যুদ্ধ সাধারণত খারাপ।শিশুদের যুদ্ধে ব্যবহার করা অপরাধ। সরকারি দল যদি এমন কোন সংজ্ঞা দেয় যে এটি একটি ধ্রুব সত্য সেক্ষেত্রে সরকারি দলের দলীয় কৌশণ ট্রুইজম দোষে আক্রান্ত হবে। অর্থাৎ কোন সর্বজন স্বীকৃত ব্যাখ্যাকে যদি সরকারি দল তাদের সংজ্ঞা নির্বাচন করে তবে বিরোধী দলের কাছে বিরোধীতা করার মত কোন যুক্তিই থাকে না।এটি একটি ধ্রুব সত্য।
টটোলজি:
টটোলজি হল এমন একটি সংঙ্গা যা ঐ সংঙ্গা দ্বারাই প্রমাণিত। একটি বিতর্কযোগ্য বিষয়কে সরকারি দল তাদের সুবিধার জন্য এবং বিরোধী দল যেন পাল্টা যুক্তি বা বিরোধীতা করতে পারে তার জন্য এমনভাবে এবং সম্পূর্ণ একপেশে ভাবে বিতর্কের প্রস্তাব বা প্রপঞ্জকে সংঙ্গায়ীত বা ব্যাখ্যা করা হয় তখন তাকে টটোলজি বলে।
যেমন, বিতর্কের প্রস্তাব যদি হয় ‘সুস্বাদু পানি নয় প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানির’ আর সরকারী দল যদি সুস্বাদু পানিকে সংঙ্গায়িত করে কোকা-কোলা হিসেবে তাহলে তা টটোলজি। এ সংঙ্গার ফলে প্রস্তাবটি হয়ে গেল ‘কোকা-কোলা নয় প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানির’ এবং এ প্রস্তাবের বিপক্ষে বিতর্ক করা প্রায় অসম্ভব বা কোন যুক্তি নেই।
হেকলিং:
হেকলিং এর বাংলার হল ‘হাস্যরসাত্মক মন্তব্য’। যে বক্তা সংসদে বক্তব্য রাখছে তাকে বোকা প্রতিপন্ন করার জন্য বা তাকে বিব্রত করানোর চেষ্টা বা নিজ দলের বক্তার বক্তব্য প্রদানের সময় তাকে উৎসাহ প্রদানের জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে হেকলিং বলা হয়। হেকলিং অবশ্যই দীর্ঘ সময়ের জন্য করা যাবে না এবং তা অবশ্যই যৌক্তিকভাবে হতে হবে যা সংসদে দৃষ্টিকটু হবে না।
যেমন নিজ দলের বক্তার বক্তব্য প্রদানের সময় বলা-ঠিক ঠিক, যৌক্তিক, একমত একমত ইত্যাদি। এবং বিপক্ষ দলের বক্তার বক্তব্য প্রদানের সময় বলা-মিথ্যা, ভুয়া, অসত্য, অযৌক্তিক, অসম্ভব ইত্যাদি।
চ্যালেঞ্জ:
সরকারি দলের উন্থাপিত প্রস্তাবের সংঙ্গায়নকে যদি বিরোধী দল মেনে না নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব উন্থাপন করে তখন তাকে চ্যালেঞ্জ বিতর্ক বলা হয়। সরকারি দলের সংঙ্গায়ন যদি খুব সংকির্ণ বা দ্বৈত হয় এবং বিরোধীতা করা প্রায় দুষ্কর বা কোন সুযোগ যদি না থাকে তখনই কেবল চ্যালেঞ্জ করা যায়। তবে কোন কারণে প্রস্তাবটিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে তার সুস্পষ্ট ক্ষেত্র, কারণ ও যৌক্তিকতা বিতর্কের শুরুতেই বিরোধী দলের নেতাকে বলতে হবে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জ বিতর্ক এর বিরুদ্ধে এবং নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে হলেও বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। এবং মনে করি, বিরোধীদলে জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের এবং ভাল উপায় হল সরকারি দলের সংঙ্গায়নের সংকির্ণতা বা দ্বৈতিকতার দিকটি স্পিকারের কাছে তুলে ধরে নিজেদের বিতর্ক করে যাওয়া। কারণ যে কোন বিচারক, সংকির্ণ বা দ্বৈত সংঙ্গায়ন সরকারী দলের দূর্বল-মানসিকতার পরিচয় বা দূর্বলতা হিসেবেই গ্রহণ করে এবং এর জন্য নেতিবাচক নম্বর প্রদান করে থাকে।
চ্যালেঞ্জ বিতর্কে যুক্তিখন্ডন পর্ব থাকে ঠিকই কিন্তু কোন দলেরই তার বিপক্ষ দলের যুক্তিখন্ডন করার সুযোগ থাকেনা। কারণ বিতর্ককে চ্যালেঞ্জ করা হলে দুটি প্রস্তাব পাশাপাশি আলোচনা করা হয়। তাই তখন যুক্তি খন্ডন পর্বে সরকারী দলকে প্রমাণ করতে হয় কেন প্রস্তাবটিকে চ্যালেঞ্জ না করেও বিতর্ক করা যেত এবং নিজেদের যৌক্তিকতা এবং যর্থাথতা। একইভাবে যুক্তি খন্ডন পর্বে বিরোধী দলকে প্রমাণ করতে হয় কেন প্রস্তাবটিকে চ্যালেঞ্জ না করে বিতর্ক করা সম্ভব ছিলনা এবং নিজেদের বিকল্প প্রস্তাবের যৌক্তিকতা এবং যর্থাথতা।

ডিবেট ফর হিউম্যানিটি - ডিএফএইচ

৩৫৫/১ (৪র্থ তলা), দিলু রোড, মগবাজার, রমনা, ঢাকা – ১২১৭, বাংলাদেশ

যোগাযোগ
৩৫৫/১ (৪র্থ তলা), দিলু রোড, মগবাজার, রমনা, ঢাকা – ১২১৭, বাংলাদেশ

টেলিফোন
০১৬৭৪৬৪৪৫৯৯, ৮৮০-২-৯৯৯৯৯৯

ফ্যাক্স
৮৮০-২-৯৯৯৯৯৯

ই-মেইল
debateforhumanity@gmail.com